২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
খুলনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক ইমরান জামান কাজল।
আজ ০৬ মার্চ ২০২৪ খ্রিঃ, ২২ ফাল্গুন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, বুধবার দুপুর ১২:৩০ ঘটিকায় কেএমপি’র সদর দপ্তরস্থ সম্মেলন কক্ষে পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা মহোদয় লবণচরা থানা পুলিশ কর্তৃক মানব পাচার চক্রের মূলহোতাসহ ০৬ (ছয়) জন আসামী গ্রেফতার ও ০২ জন ভিকটিম উদ্ধার সংক্রান্তে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দের সাথে প্রেস ব্রিফিং করেন।
কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার জনাব মোঃ মোজাম্মেল হক, বিপিএম (বার), পিপিএম-সেবা মহোদয় মিডিয়া বিফ্রিংয়ে বলেন, “খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অপরাধ দমন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ এবং নগরবাসীর সেবায় সর্বদা তৎপর।
আমরা বিগত কয়েক মাস থেকেই অস্ত্রধারী, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, জঙ্গী, মানব পাচার চক্রের মূলহোতা, মাদক ব্যবসায়ী, সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত আসামী, হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী ও ভূমিদস্যুসহ সমাজে প্রভাব প্রতিপত্তিশালী যারা নাশকতা সৃষ্টি করতে পারে তাদের গ্রেফতারের জন্য সাঁড়াশী অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি।”
এ-সময় তিনি বলেন, “এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সন্ধ্যায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সহকারি পুলিশ কমিশনার (খুলনা জোন) জনাব গোপীনাথ কানজিলাল এর নেতৃত্বে লবণচরা থানা পুলিশের একটি চৌকস আভিযানিক টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে।
মোহাম্মদ নগর এলাকার রাজা সাহেবের রাইচ মিল সংলগ্ন আদিলুজ্জামান সড়ক ২য় লেন এর জনৈক শেখ মিজানুর রহমান এর ২য় তলা বাড়ির নিচ তলা হতে সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত
১) মিল্টন মন্ডল (৪০); ২) মোঃ সাইফুল ইসলাম (২১); ৩) মোঃ হিমেল (২১); ৪) খাদিজা বেগম (২২); ৫) রত্না আক্তার @ পায়েল (২০) এবং ৬) রাবেয়া বেগম (২০)দের’কে গ্রেফতার করে।
উক্ত গ্রেপ্তার কৃত আসামিদের হেফাজতে থাকা ঘটনাস্থল হতে অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই জন ভিকটিমকে (তরুণী) উদ্ধার করা হয় যাদের ০১ জনের বয়স ১৪ বছর এবং অপর জনের বয়স ১৫ বছর।
অভিযানকালে জানা যায়, আসামী মিল্টন মন্ডল, মোঃ সাইফুল ইসলাম এবং মোঃ হিমেল’ত্রয় ভিকটিমদ্বয়কে গত ০২ মাস পূর্বে যাত্রাপালায় গান-বাজনা ও অভিনয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে নিয়ে আসে।
এ সময় কৌশলে আসামীরা ভিকটিমদ্বয়ের নগ্ন ছবি ধারণ করে তাদেরকে জোরপূর্বক আটক রেখে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করে।
উল্লেখিত ভিকটিমরা অনৈতিক কাজে লিপ্ত না হলে তাদের নগ্ন ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে এহেন জঘন্য কাজ করতে বাধ্য করে।
এছাড়াও, সেখানে (ভাড়াটিয়া বাসায়) রাতের বেলায় আসামীরা ডিজে পার্টিসহ আগতদের মনরঞ্জণের জন্য রঙ্গিন আলোয় নাচ-গানের ব্যবস্থা করে থাকে।
এমতাবস্থায়, ভিকটিমরা পতিতাবৃত্তিতে ও নাচ-গানে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে থাকে। পরবর্তীতে আরো জানা যায়, আসামীরা ভিকটিমদের এভাবে ফাঁদে ফেলে দীর্ঘদিন যাবৎ পতিতাবৃত্তি করাচ্ছে।
এবং ভরতের কলকাতা, গুজরাট, মহারাষ্ট্র ও সুরাট সহ বিভিন্ন প্রদেশে বিক্রি করে অর্থ-সংস্থান করবে। ঘটনাস্থলে অভিযানকালে সেখানে যৌন উত্তেজক বিভিন্ন ধরণের ঔষধসহ সেক্স টয় টাইপের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি পাওয়া যায়।
গত ০৫ মার্চ ২০২৪ খ্রি: খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের হ্যালো কেএমপি অ্যাপসের ইনবক্সে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যক্তির গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে মানব পাচার চক্রে জড়িত কতিপয় ব্যক্তি দুই জন ভিকটিমকে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে খুলনা মহানগরীর লবণচরা থানা এলাকার মোহাম্মদ নগরে রাজা সাহেবের রাইচ মিল সংলগ্ন আদিলুজ্জামান সড়ক ২য় লেন এর জনৈক শেখ মিজানুর রহমান এর ২য় তলা বাড়ির নিচ তলায় আটক রেখে পতিতাবৃত্তি করাচ্ছে।
প্রকৃতপক্ষে দালালের মাধ্যমে পার্টি ঠিক করে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার জন্য এই কালক্ষেপন করা হয়।”
উল্লেখ্য যে, গ্রেফতারকৃত আসামীগণ সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য।
ভিকটিমদ্বয়কে কাজের কথা বলে ডেকে এনে পতিতাবৃত্তি করানোর জন্য ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে আটক রেখে ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে অপরাধ করেছে বিধায় তাদের বিরুদ্ধে লবণচরা থানার মামলা নং-০৫, তারিখ-০৫/০৩/২০২৪ খ্রি:, ধারা-মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২ এর ৭,১০,১১ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের’কে যথানিয়মে রিমান্ডের আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং ভিকটিমদ্বয়ের বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি শেষে নিরাপদ হেফাজতে প্রদান করা হবে। অত্র মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন আছে এবং অন্যান্য আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’’
উক্ত মিডিয়া বিফ্রিংয়ে কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এএন্ডও) জনাব সরদার রকিবুল ইসলাম, বিপিএম-সেবা; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক এন্ড প্রটোকল) জনাব মোছাঃ তাসলিমা খাতুন; অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড সিপি) পলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত জনাব মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন্ হাছান, পিপিএম-সেবা; সহকারী পুলিশ কমিশনার (খালিশপুর জোন) জনাব গোপীনাথ কানজিলাল; লবণচরা থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব মোঃ হাফিজুর রহমান-সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ ও পুলিশ অফিসারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।